অদৃশ্য প্রেতের ছায়া: এক শূন্যাত্বের গল্প

 অদৃশ্য প্রেতের ছায়া: এক শূন্যাত্বের গল্প






এক অন্ধকার রাতে, শহরের শেষ প্রান্তে একটি ছোট্ট গ্রাম ছিল—রামপুর। গ্রামের মানুষজন সন্ধ্যা নামার আগেই ঘরে ফিরত। কারণ, তারা বিশ্বাস করত, রাত হলেই সেখানে ভয়ঙ্কর কিছু ঘটে। কেউ জানত না ঠিক কী, কিন্তু একটা অনুভূতি কাজ করত সবার মনে—একটি অদৃশ্য প্রেতের অস্তিত্বের অনুভূতি। এই ভৌতিক সত্তা কখনোই চোখে দেখা যায় না, তবে তার উপস্থিতি অনুভূত হয় প্রতিটি ঝরে পড়া পাতার শব্দে, রাতের বাতাসের ঠান্ডায় এবং গ্রামের অদ্ভুত নীরবতায়।


শুরুটা যেমন রহস্যময়, তেমন ভয়ংকর

গ্রামের এক কোণে একটি পুরনো ভাঙা বাড়ি ছিল, যেটি ছিল লোহার গেট দিয়ে ঘেরা। এই বাড়িটিকে ঘিরেই বেশিরভাগ রহস্য ও শঙ্কা কাজ করত। কেউ কখনো এই বাড়ির কাছে যাবার সাহস পেত না। কারণ বলা হত, সেখানে থাকত একটি অদৃশ্য প্রেত, যার নাম ‘অবিনাশ’। তার নামটি গ্রামের পুরনো পাণ্ডুলিপিগুলোতেই পাওয়া যায়, তবে অবিনাশকে নিয়ে গ্রামের পুরনো মানুষরাও খুব বেশি কিছু জানত না। তারা শুধু জানত যে, সে এক সময়ে মানুষ ছিল, কিন্তু ভীষণ অন্যায় করে মৃত্যুবরণ করার পর, সে এক অভিশপ্ত আত্মায় পরিণত হয় এবং এখন সে এই বাড়িতে বন্দী থাকে—একটি শূন্য অস্তিত্বের মাঝে।


গ্রামের সাহসী যুবক রাজু

গ্রামে রাজু নামে একজন যুবক ছিল, যে ভয় বলে কিছু মানত না। সে সাহসের জন্য গ্রামে পরিচিত ছিল। তবে একদিন তার মনে প্রশ্ন জাগে, আসলেই কী এমন কিছু আছে যা ভয়ংকর বা অভিশপ্ত? তাই সে সিদ্ধান্ত নেয়, একদিন রাতের বেলা এই পুরনো ভাঙা বাড়িটিতে গিয়ে সত্যটা জানবে।


ভাঙা বাড়িতে প্রথম পদক্ষেপ

এক অন্ধকার রাতে, যখন চারিদিকে সম্পূর্ণ নীরবতা বিরাজ করছিল, রাজু চুপিচুপি বাড়িটির দিকে এগিয়ে যায়। বাড়ির গেটটায় পৌঁছাতেই তার হৃদস্পন্দন যেন তীব্র হয়ে ওঠে। তবে তার সাহস তাকে বাড়ির মধ্যে ঢুকতে সাহায্য করে। বাড়ির ভেতরে ঢোকার পর তার চারপাশে যেন অদ্ভুত এক ঠান্ডা ছড়িয়ে পড়ে, যা তার মেরুদণ্ডকে যেন স্থির করে দেয়।


অদৃশ্য প্রেতের প্রথম উপস্থিতি

বাড়ির ভেতরে ঢুকে রাজু এক এক করে ঘরগুলো দেখে, কিন্তু কিছুই নেই। কেবল একটি শূন্য ঘর, এক পুরনো আয়না, আর একটা ভাঙা চেয়ার। আচমকা রাজুর মনে হয় যেন তার পেছনে কেউ দাঁড়িয়ে আছে, অথচ তার সামনে কিছুই নেই। রাজু সাহস নিয়ে পেছনে ঘুরতেই এক অদ্ভুত অনুভূতি হয় তার। একটি ঠান্ডা বাতাস তার গায়ে লেগে যায়, আর মনে হয় কেউ তার কানের পাশে ফিসফিস করে বলছে, “তুই পালা…।”


অবিনাশের গল্পের সত্য প্রকাশ

তবে রাজু পালায় না, বরং সে জোরে চিৎকার করে বলে, “তুই কে? কেন এমন করছিস?” কয়েক মুহূর্ত চুপ থাকার পর একটা স্বর যেন কাঁপা কাঁপা গলায় বলে, “আমি অবিনাশ, এই গ্রামে এক সময় বাস করতাম। মানুষের বিশ্বাসঘাতকতার শিকার হয়ে আমি আমার প্রিয়জনদের হারিয়েছি এবং এখন এই শূন্যতার মধ্যে বাঁচি। আমি কেবল শূন্য এক প্রেতাত্মা, আমার অস্তিত্ব নেই, আমার অনুভূতি নেই। আমি শুধু অনুভব করি শূন্যতা…”


অদৃশ্য প্রেতের অমোঘ আকাঙ্ক্ষা

এই কথাগুলো শুনে রাজুর ভেতরে এক অদ্ভুত দুঃখ অনুভূতি কাজ করে। তার মনে হয়, এই অদৃশ্য প্রেত কোনো শাস্তি পায়নি, বরং সে শুধু একাকীত্বের শিকার হয়েছে। রাজু বলে, “তুই কী চাস?” তখন অবিনাশ বলে, “আমি কিছু চাই না, শুধু এই শূন্যতা থেকে মুক্তি চাই। আমাকে মুক্ত কর, আমার এই নির্দোষ শূন্য অস্তিত্বকে শেষ কর।”


মুক্তির পথ ও শূন্যতার অবসান

রাজু, সাহস আর ধৈর্যের সঙ্গে বলে, “আমি জানি না তোর মুক্তির উপায়, কিন্তু আমি চেষ্টা করব।” এরপর রাজু সিদ্ধান্ত নেয়, পুরনো তন্ত্র-মন্ত্র ও আধ্যাত্মিক পদ্ধতির সাহায্যে অবিনাশকে মুক্তির পথ দেখাবে। সে গ্রাম থেকে একজন পুরনো তান্ত্রিককে ডেকে আনে, এবং এক ভয়ানক রাতের আচার-অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে অবিনাশের মুক্তি ঘটে।


শেষের কথাঃ এক শূন্য প্রেতের শেষ বিদায়

অবিনাশের মুক্তির পরে, ভাঙা বাড়িটির চারপাশে আবারও প্রাণের স্পন্দন ফিরে আসে। রাজু আর গ্রামের মানুষরা গভীরভাবে অভিজ্ঞতা লাভ করে, শিখে যে এই পৃথিবীর অদেখা, অদৃশ্য জগতে অনেক কিছু রয়েছে যা আমাদের সীমিত অনুভূতিতে ধরা পড়ে না।


গল্পের শেষ:

তুমি কি কখনো অনুভব করেছ, অন্ধকারের মাঝে কোথাও একটা ছায়া তোমার দিকে তাকিয়ে আছে? এই গল্প সেই রহস্যের কথা মনে করিয়ে দেবে, যা আমাদের চোখের সামনে নেই, কিন্তু অনুভূতির গভীরে সাড়া জাগায়।


এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

Next Post
No Comment
Add Comment
comment url